বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন

৭৭ সেকেন্ডের কলের সূত্র ধরে হত্যাকারী গ্রেপ্তার

৭৭ সেকেন্ডের কলের সূত্র ধরে হত্যাকারী গ্রেপ্তার

স্বদেশ ডেস্ক: মাত্র ৭৭ সেকেন্ডের ফোন কলের সূত্র ধরে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার ৫ বছরের শিশু রিফানুল ইসলাম রিফান হত্যার হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার রসুলপুর নদীর ঘাট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত ওই ব্যক্তির নাম শাকিল (২২)। তিনি কবির হোসেনের ছেলে। লাশ উদ্ধারের তিন দিনের মাথায় হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসলো রিফান হত্যার রহস্য।

এর আগে গত শুক্রবার সকালে উপজেলার বৈদ্যনাথপুর ব্রিজের নিচে থেকে শিশু রিফানুল ইসলাম রিফানের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের চাচা মিলন মিয়া বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন।

পুলিশকে দেওয়া বক্তব্যে আসামি শাকিল জানান, তিনি খুন করেননি বরং এটি একটি দুর্ঘটনা মাত্র। তিনি আরও জানান, সেদিন তার বৈদ্যানথপুর গ্রামের বাড়ির কাছে গ্যারেজের সামনে একটি ইটের ওপর বসে মাছ ধরার বরশি তৈরি করছিলেন তিনি। সকালের ১১টার দিকে রিফান ও মেহেদি দুই ভাই তার সামনে কাছে আসে। তারা একসঙ্গে গ্রামের দোকান থেকে খাবার এনে খেয়েছে। রিফান ও মেহেদি খুব দুষ্টুমি করছিল। দুষ্টুমি না করে তাদের চলে যেতে বললে মেহেদি চলে যায়। কিন্তু রিফান না গিয়ে দুষ্টুমি করেই যাচ্ছিল। তখন বিরক্ত হয়ে শাকিল তার বসার ইটটি হাতে নিয়ে ছুঁড়ে মারে। ফলে ছুঁড়ে মারা ইটটি তার মুখে পড়লে রিফান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্যারেজের ভেতরে ঢুকিয়ে বাড়ি থেকে পানি এনে মুখে ছিটিয়ে নড়াচড়া পরীক্ষা করে। কিন্তু কোনো নড়াচড়া বা শ্বাস-প্রশ্বাস পাওয়া যায়নি। ভেবে পাচ্ছিল না কি করবে তখন। প্রায় আধঘণ্টা অপেক্ষার পর রিফানের নিথর ছোট দেহটি প্রথমে একটি প্লাস্টিকের বস্তায়, পরে চটের বস্তায় ঢুকিয়ে গ্যারেজের পেছনে লাকড়ির নিচে লুকিয়ে রাখে।

পরে ৮-৯ দিন পর বস্তার ভেতর থেকে কিছুটা গন্ধ বের হলে একটি কার ভাড়া করে শাকিল। ভাড়া করা ওই কারের মাধ্যমে উপজেলার ওমরাকান্দা ব্রিজের ওপর থেকে লাশটি ফেলে দিয়ে চট্টগ্রামে চলে যান। রিফান তার চাচাতো ভাই বলেও শাকিল জানান। তিনি জানান, তাকে তিনি মারতে চাননি। ঘটনার পর থেকে ঘুমাতে পারছিলেন না, খেতে পারছিলেন না, কী করা উচিত তাও বুঝতে পারছিলেন না শাকিল।

প্রসঙ্গত, মেঘনা উপজেলার বৈদ্যনাথপুর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী শরীফ হোসেনের ছেলে রিফানুল ইসলাম ওরফে রিফান। খেলতে গিয়ে গত ১২ জানুয়ারি সকালে নিখোঁজ হয় সে। বিভিন্ন জায়গায় ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে ওই দিনই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মা রজনী বেগম। পরে গত ২২ জানুয়ারি এই উপজেলার বৈদ্যনাথাপুর ব্রিজের নিচ থেকে শিশুটির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ মাত্র তিন দিনের মাথায় আজ মঙ্গলবার তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার রসুলপুর নদীর ঘাট থেকে গভীর রাতে শাকিলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে রিফান নাকি হারিয়ে গেছে এ নিয়ে কয়েকটি শব্দের কথোপকথনের মাত্র ৭৭ সেকেন্ডের এমন ফোন কলের সূত্র ধরেই হত্যাকারী শাকিলকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এ বিষয়ে হোমনা- মেঘনা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফজলুল করিম বলেন, ‘শিশু রিফানের লাশ উদ্ধারের পর থেকেই আমাদের ঘুম নেই। রাত দিন বিভিন্নভাবে তদন্ত সাপেক্ষে মাত্র তিন দিনের মাথায় মূল হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’ হত্যাকারী শাকিল পুলিশের কাছে হত্যা ও ব্রিজের নিচে লাশ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন। তাকে কোর্টের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877